প্রকাশিত: Wed, Jan 11, 2023 7:15 AM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 3:34 AM

কোভিড কি চলে গেছে?

রুমি আহমেদ খান

কোভিড-১৯ চলে যায়নি, বহাল তবিয়তেই আছে। এর নতুন আবাস্থল; মানবজাতির মাঝে। এই ভাইরাস যাবার জন্য আসেনি। তবে কোভিড-১৯ এর অ্যান্ড গেইম নিয়ে আমরা যা প্রেডিক্ট করছিলাম, তাই হতে চলেছে। এটা আস্তে আস্তে অন্যান্য ভাইরাসের মতোই একটা মামুলি জ্বর, সর্দি কাশির ভাইরাসে পরিণত হচ্ছে। কোভিড-১৯ আসার আগে আরো চার ধরনের করোনাভাইরাস মানুষ নামক স্পিসিসে প্রবেশ করেছে এবই ওই চার করোনাভাইরাস আমাদের শীতকালীন সর্দি কাশির এক তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী। কোভিড-১৯ এর ভাইরাস ঝঅজঝ-ঈড়ঠ-২ ও ওই টাইপের পঞ্চম ভাইরাস হয়ে যাবে বছর খানেকের মধ্যে। তবে এইমুহূর্তে কি হচ্ছে? এক বছর ধরে আমরা এখন ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টেই আছি! যুক্তরাজ্যে উদ্ভব হওয়া আলফা, দক্ষিণ আফ্রিকাতে উদ্ভব হওয়া বেটা, দক্ষিণ আমেরিকাতে  উদ্ভব হওয়া গামা ভ্যারিয়েন্ট; কলকাতায় উদ্ভব হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় উদ্ভব হয় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর! 

এই ভ্যারিয়েন্ট গুলোর মধ্যে ভারত কলকাতায় উদ্ভব হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট টা সবচেয়ে বিধ্বংসী ছিল! ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট যখন আঘাত হানে ২০২১ এর সামারে;  তখন ভারতের মতো শক্ত ইম্মিউনিটির দেশ ও স্টিডি হেলথকেয়ার সার্ভিসের দেশ ও মুখ থুবড়ে পড়েছিল; ওদের ননস্টপ চিতার আগুন স্পেস থেকে  দেখা যাচ্ছিলো! ডেল্টার মতো বিধ্বংসী ভ্যারিয়েন্ট বাকি বিশ্বে ২০২১ এর সামারে না এসে ২০২০ এর সামারে এলে মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো একশোগুন বেশি হতো - আমরা অনেকেই হয়তো আজ থাকতাম না! যখন ডেল্টা এলো তখন পশ্চিমের হাসপাতালগুলো মোটামুটি প্রিপেয়ার্ড ছিল - অনেকেই পুরোপরি ভ্যাসিনেটেড - আমরা চিকিৎসার বেসিক ব্যাপারগুলো বুঝে গিয়েছি - হাসপাতাল গুলিতে অক্সিজেন আর ভেন্টিলেটর এর প্রচুর সাপ্লাই ছিল! তারপর ডেল্টা পুৎ দা হিউমেন কাইন্ড অন ইটস নি! 

ডেল্টার পর ওমিক্রন এলো অনেকিটা সুসংবাদের মতোই। ডেল্টার চেয়ে অনেক বেশি ছোঁয়াচে হলেও - মিউটেশন এর কারণে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার মতো আমাদের লাংগস বা ফুসফুসে ভালো করে ঢুকতে পারে না! ফলে প্রচুর মানুষের ইনফেকশন হলেও খুব কম মনুষ্যের নিউমোনিয়া হচ্ছে আর অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এর একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে ইম্মিউন ইভেশন! কনস্ট্যান্ট মিউটেশন এর কারণে একবার ওমিক্রন ইনফেকশন হলে তা রি-ইনফেকশন প্রিভেন্ট করছে না। ফলে বিশাল এক অংশ মানুষের বার বার ইনফেকশন হচ্ছে! বার বার মাইল্ড ইনফেকশন আর অনেক মানুষের ভ্যাকসিন পাওয়ার ফলে যা হয়েছে - আমাদের চারদিকে উঁচু একটা ইম্মিউনিটির দেয়াল দাঁড়িয়ে গিয়েছে যা মোটাদাগের আমাদের কে সিরিয়াস ইনফেকশন থেকে রক্ষা করছে। ওমিক্রন কিন্তু নিরন্তর মিউটেশন করছে আর নুতন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম দিচ্ছে! ইঅ১ থেকে ইঅ২ থেকে ইঅ৫ থেকে ইছ.১ -এখন নিউ ইয়র্কে উদ্ভব হলো ঢইই.১.৫ ঝঁন-ষরহবধমব ড়ভ ঙসরপৎড়হ াধৎরধহঃ। এখন যা প্রেডিকশন করা যাচ্ছে তা হলো আগামী মাসের মধ্যেই  ঢইই.১.৫ গ্লোবালি ডমিনেট ভ্যারিয়েন্ট হয়ে যাবে! 

এতো মিউটেশন এর পর ও ডঐঙ কিন্তু কোনোটাকেই নুতন করে গ্রিক আলফাবেট ডেসিগনেশন দিচ্ছে না। কারণ একটাই - এই ভ্যারিয়েন্ট গুলো আলফা বা ডেল্টার মতো সিরিয়াস নিউমোনিয়ার হার বাড়াচ্ছে না। মৃত্যুর হার বাড়াচ্ছে না। কারণ ডেল্টার মতো ওমিক্রন এর কোনো সাবলিনিয়েজ গুলোই আমাদের ফুসফুসে ভালোভাবে  ঢুকে  নিউমোনিয়া করছে না। ডেল্টার যেই মিউটেশন ঐটাকে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট করেছে, সেই মিউটেশন টাই নিউমোনিয়া ঘটনার ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। চায়নার ব্যাপার আলাদা।

চায়নাতে এখন ও ডোমিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট হচ্ছে ইঅ.৫ যা আমেরিকাতে ডোমিন্যান্ট ছিল চার পাঁচ মাস আগে! কিন্তু চায়নাতে অন্যান্য দেশের মতো ইম্মিউনিটির উঁচু দেয়াল এই। কারণ দুটো। প্রথমত ন্যাশালিস্টিক আত্যাভিমান। ওদের যে ভ্যাকসিন প্ল্যাটফর্ম গুলো সাইনোভ্যাক আর সাইনোফার্ম, ওগুলো যাচ্ছেতাই কোয়ালিটির ভ্যাকসিন- ওগুলো কাজ করছে না। কাজ করছে আমেরিকার এম আর এন এ ভ্যাকসিন গুলো! চায়না মিলিটারি ওগুলো বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত চায়না ইজ ভিকটিম অফ দেয়ার সাকসেস ইন সোশ্যাল আইসোলেশন! চায়না কঠোর লকডাউন করে আর মানুষ কে ঘরের ভিতর বন্দি রেখে ও কঠোর মাস্ক ম্যান্ডেট দিয়ে এমন ভাবে কোভিড -১৯ প্রিভেন্ট করেছে যা যেখানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সবারই দুতিন বার কোভিড -১৯ হয়ে 

গিয়েছে - চাইনিজ পপুলেশনের মেজরিটির কোন ইনফেকশন ও হয়নি। ফলে ওদের না আছে ভ্যাকসিন ইন্ডিউসড ইম্মিউনিটি না আছে ডিজিজ বেইজড ইম্মিউনিটি।

চায়নার অথরিটি বলছে মৃত্যুর হার বেশ কম - যদিও পশ্চিমা মিডিয়া চাইনিজ ন্যারেটিভ বিশ্বাস করছে না - আমি মনে করি ওরা নাম্বার খুব একটা কমাচ্ছে না! কারণ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এ মৃত্যু বেশি হবার কথা না। চিকিৎসার জন্য প্যাকসলভিড খুবই এফেকটিভ! মলিনুপীরাভির কাজ করে না! 

বরঞ্চ মলিনুপীরাভির নুতন মিউটেশন বাড়িয়ে দেয় বলে এটা কে মার্কেট থেকে উইথড্র করার দাবি উঠছে এখন! হয়তোবা শিঘ্রীই রেমডেসিভিড় ট্যাবলেট বাজারে আসার সম্ভাবনা আছে। এই শীতে নুতন ভাইভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন রোল আউট হয়েছে - ভ্যাকসিন টা নেটিভ উহান ভ্যারিয়েন্ট আর ওমিক্রন ইঅ.৫ ভ্যারিয়েন্ট এর এগেইনস্ট এ হলেও - নুতন ওমিক্রন ঢইই.১.৫ সহ সব ভ্যারিয়েন্ট এর এগেইনস্ট এ কাজ করছে। আপনারা যারা নুতন ভ্যাকসিন এখন ও নেন নাই- অতি সত্বর নিয়ে নিন।  লেখক: এমডি এফসিসিপি, মেডিসিন পালমোনারি ক্রিটিয়াকল কেয়ার মেডিসিন এর অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিন ডেল মেডিকেল স্কুল